Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

গর্ভবতী নারীর করোনা ভ্যাকসিন কেন জরুরি!

অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা:
প্রকাশিত: শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৭:৪৭
অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম করোনা। আজ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এই ভাইরাস পৃথিবীর জনজীবন বিপর্যস্ত করে রেখেছে এবং লাখো প্রাণহানি ঘটিয়েছে। এই ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়ে সংক্রমণ বাড়িয়ে যাচ্ছে। গর্ভবতী মায়েরাও এই ঝুঁকির বাইরে নয় বরং স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঝুঁকির পরিমাণ সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি। তবে আশার কথা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টায় বেশ কিছু ভ্যাকসিন পাওয়া গিয়েছে, যা করোনার বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে আট ধরনের করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং প্রয়োগ হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে এসব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৬০ থেকে ৯৫ ভাগ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সব ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সংস্থা থেকে জনগণকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এখন ১৮ ঊর্ধ্ব মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গর্ভবতী বা গর্ভধারণে ইচ্ছুকরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন কি না?

এখন পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন গবেষণার তথ্য থেকে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিন নেওয়া নিরাপদ। রয়াল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলোজি [Royal College of Obstetricians and Gynaecologists (RCOG)]-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. প্যাট ওব্রাইয়েন (Pat O'Brien) বলেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২ লাখ গর্ভবতী ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং কারো বাড়তি কোনো জটিলতা বা উপসর্গ দেখা যায়নি।

গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিন নেওয়া নিরাপদ। ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে তাদের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে যা গর্ভের শিশুরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক লাখ ঊনচল্লিশ হাজার এবং যুক্তরাজ্যের প্রায় সাতান্ন হাজার গর্ভবতী নারীকে পর্যবেক্ষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। বরং ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে তাদের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে যা গর্ভের শিশুরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করছে।

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, করোনা ভ্যাকসিন যারা নেননি, করোনা আক্রান্ত হলে গর্ভকালীন জটিলতা থেকে শুরু করে গর্ভপাত, এমনকি মৃত্যুর হার যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের থেকে বেশি। জার্মান এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিন যেসব গর্ভবতীরা গ্রহণ করেননি তারা ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের থেকে প্রায় বিশগুণ ঝুঁকির মুখে আছেন।

গর্ভাবস্থায় মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকেন। করোনা এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে, তাই অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে এই ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমানো উচিত।

বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গর্ভবতী যেসব মায়েরা করোনা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন, তারা অধিকাংশই ভ্যাকসিন নেননি অথবা দুটি ডোজ কমপ্লিট করেননি। তাই বিশ্বব্যাপী গর্ভবতী, গর্ভধারণে ইচ্ছুক এবং বুকের দুধ পান করান, এমন সকলকেই আর সবার মতো ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

গর্ভবতী যেসব মায়েরা করোনা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন, তারা অধিকাংশই ভ্যাকসিন নেননি অথবা দুটি ডোজ কমপ্লিট করেননি। পরবর্তী প্রশ্ন আসতে পারে কখন ভ্যাকসিন নেওয়া নিরাপদ? গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময়েই ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে তবে ২০ সপ্তাহের পর নিলে সেটা সম্পূর্ণ নিরাপদ।

অনেকেই জানতে চান গর্ভাবস্থায় করোনা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর উত্তর হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধের প্রটোকল মেনে চলা, অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা, সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, নাকে-মুখে অকারণ হাত না দেওয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা, সর্বোপরি যতটা সম্ভব সচেতন থাকা।

পরবর্তী প্রশ্ন আসতে পারে, একজন ভ্যাকসিনেটেড মা কি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, বুকের দুধের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে এন্টিবডি বাচ্চার শরীরে যাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন বুকের দুধের মাধ্যমে করোনা বাচ্চার মধ্যে ছড়ায় না। তবে মা যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সতর্কতার জন্য বুকের দুধ পান করানোর সময় মাস্ক পরতে পারেন এবং দুধ কোনো পাত্রে রাখলে সেগুলো যেন যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বোপরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ।। প্রসূতি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516